ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পোকখালী চৌফলদন্ডীতে অরক্ষিত বেড়ীবাঁধ ঝুঁকিতে ১৮ হাজার পরিবার

beribadh picসেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি, কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী-চৌফলদন্ডী উপকূলীয় মানুষের মাঝে আকাশে মেঘ আর বৈরি আবহাওয়া দেখলেই সৃষ্টি হয় নানা আতঙ্ক, অজানা আশঙ্কার ভয়ে দিন কাটে তাদের। কারণ এ উপকূলবাসী স্বচক্ষে দেখেছে বিভিন্ন সময়ে বয়ে যাওয়া প্রলংকরী ঘুর্নিঝড়ের ভয়াবহ তান্ডব। দীর্ঘদিন ধরে গোমাতলী, চৌফলদন্ডী উত্তর ও দক্ষিণ উপকূলে টেকসই বেড়ীবাঁধের অভাবে ঝুঁকির মুখে বসবাস করছে ১৮হাজার পরিবার। ভাঙ্গন ছাড়াও অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা তীথিতে সাগরে সৃষ্ট উঁচু জোয়ারের প্রভাবে বিভিন্ন সময় বেড়ীবাঁধের বেশ কয়েকটি স্পটে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরনো নির্মিত বেড়ীবাঁধের কমপক্ষে ৯/১০টি স্পটে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া বাঁধের আরো ৪/৫টি স্থানে আড়াআড়িভাবে মাটি সরে গিয়ে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহু বছর আগের এ পুরনো বাঁধটি নির্মাণের সময় কাজের গুণগত মান ঠিক ছিলনা। নির্বাচিত ঠিকাদার চুক্তিমতে কাজ সম্পন্ন করেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে তাদের।

এলাকাবাসী বলেন, দ্রুত ভেঙ্গে যাওয়া অংশসহ এ বাঁধ মেরামত করা না হলে জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারে যে কোন সময় অনায়াসে সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে পুরো এলাকা পানিবন্দী হয়ে যাবে। এতে চৌফলদন্ডী ও গোমাতলীর শত শত পরিবার বিশুদ্ধ পানি সংকটসহ নানা দুর্ভোগে পড়বে। অতীতে ঘটে যাওয়া বেশ ক’টি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখলেই তা অনুমান করা যায়।

জানা গেছে, এলাকার মানুষের দূর্যোগের আঘাত থেকে রক্ষা করতে এবং দূর্যোগকালীন ঝুঁকি কমাতে ১৯৯৩ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত বেড়ীবাঁধ নিজেই এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি ঘুর্নিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বেড়ীবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে অনেকাংশে। কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে বেড়ীবাঁধের এ অবস্থা বলে স্থানীয়দের অভিমত। রোয়ানুর তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ অসংখ্য পরিবার এখনো ফিরতে পারেনি স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, “ম্যারিএন” নামে ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল ভয়াবহ প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড়। ঘুর্ণিঝড়টি প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে। ঘুর্ণিঝড়ের ফলে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে ফুঁসে উঠা সমুদ্রের ২৫ ফুট উঁচু ঢেউয়ের ছোবলে টেকনাফ থেকে ভোলা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকা ভেসে যায়। ঐ প্রলয়ে সরকারী হিসেবে প্রাণহানির সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৮ হাজার বলা হলেও বেসরকারী হিসেবে এ সংখ্যা ছিল দ্বিগুণ। প্রাণ হারায় প্রায় দু’লক্ষ মানুষ। গৃহহারা হয়েছিল প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। এছাড়া গত বছরের ২১ মে ঘুর্নিঝড় রোয়ানুর আঘাতে কক্সবাজার উপজেলার গোমাতলী, চৌফলদন্ডীর বিভিন্ন এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়ীবাঁধের অংশ দিয়ে নিয়মিত জোয়ারের পানি ঢুকছে। লবণাক্ত পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, বীজতলা, চিংড়িঘের, লবণ মাঠ, মাছ ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরিকল্পিত বেড়ীবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় গোমাতলী, চৌফলদন্ডীর ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ প্রতি বর্ষা আসলেই আরো একটি ২৯শে এপ্রিলের ছোবল আতঙ্কে রীতিমত ভয়ে থাকেন। শীঘ্রই অরক্ষিত এ বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জোর দাবী জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর পর কক্সবাজার সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এবং উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে এলাকাবাসীকে আশ্বাস দিলেও এখনো কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এলাকার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ীবাঁধ নির্মাণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Select Files

পাঠকের মতামত: